ঘরে তৈরি ঘি ও বাটার রেসিপি !

ঘি ও বাটার

🧈 ঘরে তৈরি ঘি ও বাটার রেসিপি | স্বাস্থ্যকর ও পারিবারিক পদ্ধতিতে

🌿 ভূমিকা:

ঘি ও বাটার—এই দুইটি উপাদান শুধু রান্নার স্বাদ বাড়ায় না, বরং আমাদের স্বাস্থ্যের প্রতিও গুরুত্ব বহন করে। বাজারের কেনা ঘি ও বাটারে অনেক সময় সংরক্ষণকারী ও কৃত্রিম গন্ধ মেশানো থাকে, যা দীর্ঘমেয়াদে শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই ঘরে বসেই যদি খাঁটি দুধ দিয়ে স্বাস্থ্যকর বাটার ও ঘি তৈরি করা যায়, তাহলে সেটা সবার জন্যই উপকারী।

এই পোস্টে আমরা দেখবো কিভাবে সহজে এবং খাঁটি উপায়ে দুধ থেকে বাটার ও ঘি তৈরি করা যায়। এটি বিশেষ করে সেই সকল মায়েদের জন্য উপযোগী, যারা সন্তান ও পরিবারের স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন।


🐄 উৎপত্তি ও প্রচলন:

ঘি ও বাটারের উৎপত্তি ভারতীয় উপমহাদেশে বহু প্রাচীন কাল থেকেই প্রচলিত। আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় ঘিকে “স্বর্ণ” রূপে দেখা হতো, কারণ এটি হজমশক্তি বাড়ায় ও শরীরে তাপ জোগায়। বাটার বা মাখনও গ্রামীণ জীবনযাত্রার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ, বিশেষ করে সকালবেলা রুটি বা পরোটার সঙ্গে খাওয়া হতো।


✨ কেন ঘরে তৈরি বাটার ও ঘি খাবেন?

  1. কৃত্রিম রাসায়নিক মুক্ত: বাজারের ঘিতে প্রিজারভেটিভ থাকে, ঘরের ঘিতে তা থাকে না।
  2. স্বাদ ও গন্ধে অতুলনীয়: খাঁটি দুধের ঘি ও বাটারে প্রাকৃতিক ঘ্রাণ থাকে।
  3. বাচ্চাদের জন্য নিরাপদ: প্রাকৃতিক উপায়ে প্রস্তুত, তাই শিশুদের খাবারে ব্যবহার করা নিরাপদ।
  4. খরচ সাশ্রয়ী: দুধ থাকলেই সহজে তৈরি করা যায়, বাজারের তুলনায় সস্তা।
  5. আয়ুর্বেদ অনুসারে উপকারী: আয়ুর্বেদে ঘি কে শুদ্ধ ও স্বাস্থ্যকর উপাদান হিসেবে দেখা হয়।

বাটার
বাটার

🥛 উপকরণ:

বাটার তৈরির জন্য:

  • গরুর দুধ – ২ লিটার (সম্পূর্ণ ফ্যাটযুক্ত)
  • ঠান্ডা পানি – প্রয়োজনমতো

ঘি তৈরির জন্য:

  • ঘরে তৈরি বাটার – ২৫০ গ্রাম (অথবা বাজারের খাঁটি মাখন)
  • এলাচ (ঐচ্ছিক) – ২–৩ টি (ঘ্রাণের জন্য)
  • তবে ঘির নিজস্ব ঘ্রাণ টাই অন্য রকম

প্রস্তুত প্রণালি ধাপে ধাপে

✅ ধাপ ১: দুধ থেকে ক্রিম সংগ্রহ করা

১. প্রথমে গরুর দুধ ভালোভাবে জ্বাল দিন এবং সম্পূর্ণ ঠান্ডা করুন।
২. দুধের উপর জমে থাকা ক্রিম বা সর (ফ্যাট) একটি পাত্রে আলাদা করে তুলুন।
৩. প্রতিদিন এভাবে সর জমিয়ে ৬–৭ দিন পর্যন্ত ফ্রিজে রেখে দিন (বেশি দিন জমালে ডিপে রাখবেন)।
৪. এক বাটিতে ১ কাপ মতো সর জমলে, তখন আপনি বাটার তৈরির প্রক্রিয়ায় যেতে পারেন।


✅ ধাপ ২: বাটার তৈরি

১. সর বা ক্রিমটি ব্লেন্ডারে বা হাতে বিটারে দিয়ে ঠান্ডা পানি দিয়ে ফেটাতে থাকুন।
২. কিছুক্ষণ ফেটানোর পর ক্রিমটি থেকে হলুদাভ রঙের মাখন আলাদা হয়ে যাবে এবং নিচে পাতলা তরল (বাটার মিল্ক) থাকবে।
৩. একটি চালুনি দিয়ে বাটার ও বাটার মিল্ক আলাদা করুন।
৪. বাটারটি ঠান্ডা পানিতে কয়েকবার ধুয়ে পরিষ্কার করুন যেন কোনো দুধজাত পদার্থ না থাকে।


✅ ধাপ ৩: ঘি তৈরি

১. একটি প্যানে তৈরি বাটার দিন ও মাঝারি আঁচে জ্বাল দিতে থাকুন।

২. ধীরে ধীরে বাটার গলে গিয়ে ফুটতে শুরু করবে। মাঝে মাঝে নাড়ুন যেন পুড়ে না যায়

৩. কিছুক্ষণ পর দেখতে পাবেন সোনালি রঙের ঘি ওপর ভেসে উঠছে এবং নিচে দুধের অংশ পুড়ে বাদামি হচ্ছে।

৪. একসময় বাটার থেকে ঘি আলাদা হয়ে যাবে, তখন গন্ধে ও রঙে তা স্পষ্ট বোঝা যাবে।

৫.সম্পূর্ণ ঠান্ডা হতে দিন।

৬. একটি ছাঁকনি দিয়ে ঘি ছেঁকে কাচের বয়ামে সংরক্ষণ করুন।


ঘি ও বাটার
ঘরে তৈরি ঘি

পরিবেশন আইডিয়া:

  • গরম ভাতের উপর ১ চামচ ঘি দিয়ে পরিবেশন করুন।
  • পরোটা, রুটি বা নান ব্রেডের সঙ্গে বাটার মাখিয়ে খেতে দিন।
  • বাচ্চাদের খিচুড়ি, খেসারি ডাল বা সবজিতে ব্যবহার করুন।
  • বাটার দিয়ে কেক, বিস্কুট বা পাউরুটি তৈরি করতে পারেন।

ব্যবহার ও উপকারিতা:

ঘি এর ব্যবহার:

  • কফ ও ঠান্ডা দূর করে।
  • হজমে সাহায্য করে।
  • আয়ুর্বেদ মতে ব্রেইন পাওয়ার বৃদ্ধি করে।
  • ত্বক ও চুলে প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে

বাটার এর ব্যবহার:

  • রান্নায় বাটার ব্যবহার করে সুস্বাদু স্বাদ আনা যায়।
  • শিশুর খাবারে পরিপূরক ফ্যাট হিসেবে ব্যবহার হয়।
  • পেস্ট্রি, কুকিজ ও কেক তৈরিতে অপরিহার্য উপাদান।

প্রায়শই জিজ্ঞাসা (FAQ)

১. কোন দুধ থেকে ঘি ভালো হয়?

উত্তর: সম্পূর্ণ ফ্যাটযুক্ত গরুর দুধ থেকে তৈরি সর দিয়ে ঘি সবচেয়ে ভালো হয়

২. বাটার ফ্রিজে কতদিন রাখা যায়?

উত্তর: বাটার ফ্রিজে ৭–১০ দিন ভালো থাকে; ঘি ১–২ মাস পর্যন্ত স্থায়ী হয়।

৩. ঘি ও বাটার কি এক জিনিস?

উত্তর: না। বাটার থেকে ঘি তৈরি হয়। বাটার হলো দুধের ফ্যাট, আর ঘি হলো সেই ফ্যাট গলিয়ে তৈরি খাঁটি তৈলজাত পদার্থ।

৪. বাটার মিল্ক কী করবেন?

উত্তর: বাটার মিল্ক দিয়ে রুটি তৈরি, লস্যি, বা তরকারিতে ব্যবহার করা যায়।


💡 টিপস:

  • ফেটানো ক্রিমের সঙ্গে বরফ ঠান্ডা পানি দিলে বাটার দ্রুত আলাদা হয়।
  • ঘি ছাঁকার সময় ছাঁকনি ভালো করে পরিষ্কার রাখবেন।
  • এলাচ বা তেজপাতা দিলে ঘি আরও সুগন্ধি হয়।
  • কাচের বোতলে ঘি সংরক্ষণ করলে তা দীর্ঘদিন ভালো থাকে।
  • বাটার ফ্রিজে রাখলে শক্ত হয়; ব্যবহারের আগে রুম টেম্পারেচারে রাখুন।

 

📝 উপসংহার:

ঘরে তৈরি বাটার ও ঘি শুধু স্বাস্থ্যকরই নয়, বরং এটি আমাদের খাদ্যাভ্যাসে একটি পরিপূর্ণতা আনে। খাঁটি দুধের সর থেকে তৈরি এই ঘি ও বাটার শিশু থেকে বৃদ্ধ—সবার জন্যই উপকারী। আপনি যদি পরিবারকে ভালো রাখতে চান,

তবে আজ থেকেই শুরু করুন এই স্বাস্থ্যকর ঘি ও বাটার তৈরি।

 

One thought on “ঘরে তৈরি ঘি ও বাটার রেসিপি !

Comments are closed.